স্টাফ রিপোর্টার
বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সিলেট নগরীর ইন্টারনেট ক্যাবল লাইন অপসারণ না করার আহবান জানিয়েছে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানদের সংগঠন সিলেট আইএসপি এসোসিয়েশন।
গত বুধবার দুপুর ১২টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আহবান জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট আইএসপি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক সত্যজিৎ দেব অর্নব বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সিলেট নগরীর ইন্টারনেট ক্যাবল লাইন অপসারণ করা হলে, সিলেটের প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। এমন কি পুরো বিশ্ব থেকে তথ্য প্রযুক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সেবার আওতায় বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অচল হয়ে পড়বে। যেমনটি ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সিটি করপোরেশন হঠাৎ করে রাতের আধারে ইন্টারনেটের ক্যাবলগুলো কেটে দেওয়ার কারণে হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবন্দ বলেন, বৈদ্যুতিক ক্যাবলের সাথে ইন্টারনেট ক্যাবলগুলো ভূগর্ভস্থ করার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বারবার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো ধরনের পদক্ষেপ ছাড়াই স¤প্রতি গণমাধ্যমে নোটিশ দিয়ে জানিয়েছেন সিলেটে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হলে তিনি কিংবা সিটি করপোরেশন দায়-দায়িত্ব নেবে না। এমন পরিস্থিতিতে সিলেটে ইন্টারনেট সেবায় বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসোসিয়েশনের ৪৩টি ইন্টারনেট কোম্পানী বিটিআরসির লাইসেন্স নিয়ে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে আসছে। যার গ্রাহক সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার। বিকল্প ব্যবস্থা না করতে পারলে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়বে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সত্যজিৎ দেব অর্নব বলেন, বর্তমানে শাহজালাল মাজার এলাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। জিন্দাবাজার এলাকায় সকল ইন্টারনেট কোম্পানির মূল কার্যালয়। এখান থেকে পুরো মহানগরে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হয়। যখন জিন্দাবাজার এলাকার খুঁটিগুলো অপসারণ করা হবে, তখন পুরো নগরে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হবে। তাই গ্রাহকের কথা চিন্তা করে বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত পিডিবির খুঁটিগুলো যেন সরানো না হয়।
মেয়রের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তহীনতার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আমাদেরকে নোটিশ দিয়ে জানান যে, আমরা যেন আম্বরখানা থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত সকল ইন্টারনেট ক্যাবল সরিয়ে ফেলি। সিলেট নগরকে তারবিহীন করতে এ পদক্ষেপ। আমরাও একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন সিলেট মহানগর চাই। কিন্তু, ইন্টারনেট ক্যাবল সরানোর বিকল্প কোনো পদ্ধতি না রেখেই তিনি আমাদেরকে নোটিশ প্রদান করেন। এ নিয়ে আমরা তার সাথে বারবার বৈঠক করে কোনো ফল পাইনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইন্টারনেট ক্যাবল ভূগর্ভস্থ করতে গেলে গ্রাহকের খরচ প্রায় ৫ গুণ বেড়ে যায়। তাই আমরা স্ট্রিট ল্যাম্পের সাথে ইন্টারনেট ক্যাবলের সংযোগ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেই এবং তিনিও তাতে সম্মত হন। কিন্তু পরে এ সিদ্ধান্ত থেকেও তিনি সরে আসেন।
সত্যজিৎ দেব অর্নব বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন যদি এই অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে পুরো সিলেট মহানগরই ইন্টারনেটবিহীন হয়ে পড়বে। তথ্য প্রযুক্তির এই যোগে এটা কি ভাবা যায় ইন্টারনেট ছাড়া একটি নগর? বর্তমান সময়ে মানুষের দৈনিন্দন জীবনযাপন, অর্থনীতিসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ইন্টারনেট নির্ভর। মেয়র নিজে ডিজিটাল সিলেটের স্বপ্ন দেখেন। বাস্তবেও তিনি তা রূপ দিতে চান। আমরাও চাই সিলেট তাই হোক। কিন্তু ইন্টারনেট সেবা চালু না থাকলে তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না।
ইন্টারনেট ক্যাবল নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত যেভাবে আছে, সেভাবেই রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট আইএসপি এসোসিয়েশনের আহবায়ক মাসুদ রানা, যুগ্ম আহবায়ক সত্যজিৎ দেব অর্নব, ওয়াহিদুর রহমান, বাহার হোসেন, নাঈমুজ্জামান নাঈম, মুহিবুর রহমান ইমন, লাপাজ আল মাহমুদ ও দেবব্রত পাল দেবু।
