দক্ষিণ সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
মরণঘাতী করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর প্রভাবে দিশেহারা পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে এই ভাইরাস। ফলে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
মরনঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে সারাদেশের ন্যায় অঘোষিত লকডাউনে বন্ধ রয়েছে ‘হাওরের উঠান’ খ্যাত দক্ষিণ সুনামগঞ্জের স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শপিং মল ও সকল ধরণের যানবাহন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট ও পণ্যবাহী যান চলাচলও সীমিত করা হয়েছে।
চলমান অবস্থায় সব শ্রেণির মানুষের সমস্যা হলেও বেশি বিপাকে পড়েছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জের মধ্যবিত্তরা। নিম্নবিত্তদের দিকে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন। কিন্তু চরম অসুবিধায় দিন পার করলেও সামাজিক সম্মান অবক্ষয়ের ভয়ে মধ্যবিত্তরা কাউকে কিছু বলতে পারছেন না।
উপজেলার পাগলা বাজারে ভাত ও চায়ের ছোট হোটেলের ব্যবসা আছে হাবিব মিয়ার। ব্যবসা থেকে যে আয় হতো, তাতে সংসারটা ভালোভাবে চলে যেত। তার কোনো সঞ্চয় নেই। গত চার বছর ধরে ব্যবসা করলেও এমন সংকটে কখনওই পড়েননি তিনি। তিন সপ্তাহ ধরে দোকান বন্ধ। করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠিন অনিশ্চয়তায় পড়ে অন্ধকার দেখছেন চোখে-মুখে। কিভাবে দোকান ভাড়া দেবেন, কিভাবে সংসার চালাবেন- সেই চিন্তায় ঘুম আসে না তার।
নাম প্রকাশে অনিচ্চুক এক সেলুন ব্যবসায়ী বলেন, সরকারি নির্দেশে দোকান বন্ধ রয়েছে অনেকদিন ধরে। দৈনিক যা আয় করতাম, তা দিয়েই সংসার ভালোভাবে চলতো। সামান্য কিছু সঞ্চয় ছিল, তা দিয়ে এতদিন টেনেটুনে সপ্তাহখানেক চালিয়েছি। এখন ধারে টাকা এনে চলছি। এমন চলতে থাকলে না খেয়েই মরতে হবে। কারণ সংসার চালাতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। চক্ষুলজ্জায় কষ্টগুলো প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
এমন বিপাকে রয়েছেন প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীলর একাধিক মধ্যবিত্ত পরিবারও। প্রবাসে থাকা উপার্জনকারী ব্যক্তি লকডাউনে থাকায় কাজে যেতে পারছেন না। ফলে টাকা পাঠাতে না পারায় চরম বিপাকে রয়েছে দেশে থাকা পরিবার।
উপজেলায় এমন অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার রয়েছে, যারা চোখে ঘোর অন্ধকার দেখছে, কিন্তু চক্ষুলজ্জার ভয়ে কষ্টগুলো প্রকাশ করছে না ।
এ বিষয়ে জানতে কথা হয় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন্নাহার শাম্মীর সাথে। তিনি বলেন, মধ্যবিত্তদের তালিকা প্রস্তুত করতে প্রতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিয়েছি। যদি কেউ তাদের কাছে নাম তালিকাভুক্ত করতে সংকোচ প্রকাশ করেন, তবে তারা চাইলে সরাসরি আমাকে ফোন কলে কিংবা ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে জানিয়ে নাম তালিকাভুক্ত করতে পারেন। তালিকাভুক্ত হওয়া প্রত্যেকের বাড়িতে সরকারি বরাদ্দকৃত জিআর চাল পাঠিয়ে দেওয়া হবে।