দোয়ারাবাজার প্রতিনধি
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যাওয়া শ্রমিক যুবকের মরদেহ দাফনে মসজিদের খাটিয়া ব্যবহার করতে না দেয়া ও দাফনের সময় গোসল না করানোর অভিযোগ করেছে তার পরিবার। এ দিকে অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলছেন প্রশাসন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন মেম্বাররা।
বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই যুবকের সাদা কাফনের কাপড়ে মোড়ানো একটি ছবি ভাইরাল হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়।
পরিবারের সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় বক্তারপুর গ্রামে করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মো. সালাম (২২) নামের এক শ্রমিক। সে সিলেটের একটি ইট ভাটায় কাজ করতো। ঘটনার পরদিন বুধবার সকালে করোনা উপসর্গে মারা যাওয়ায় তার নমুনা সংগ্রহ করা ও দাফনের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও মারা যাওয়া সালামের নমুনা সংগ্রহ করার পর তার মরদেহ না গোসল করিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করেন কর্মকর্তারা। এসময় মারা যাওয়া সালামের মা সালেমা বেগম তার ছেলের লাশ গোসল করানোর জন্য পানি এনে দিলেও কর্তৃপক্ষরা সেটি বাঁধা দেয় এবং গ্রামের মসজিদ থেকে খাটিয়া না দেওয়া অন্য একটি গ্রাম থেকে খাটিয়া নিয়ে আসলেও সেই খাটিয়া শোয়াতে বাধা দেন ইউপি মেম্বার শরিফ উল্লাহ।
কারণ হিসেবে তার পরিবারকে জানান তার মরদেহ খাটিয়া রাখলে অন্যান্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া নিয়মানুযায়ী করোনা উপসর্গ মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা দাফন করার কথা থাকলেও সেটিও করেন নি তারা। মারা যাওয়া সালামের বাবা জইবুর রহমান ও তার দুই ছেলে খালিক ও আলীনূর মিলে মরদেহ কবরে দাফন করেন। কিন্তু তার আগে মারা যাওয়া সালামের লাশের কাফনের কাপড় পরিবার থেকেই দেওয়া হয় এবং তার মরদেহ স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া একটি প্যাকেটে মোড়ানো হয়।
এদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া শ্রমিক মো. সালামের দাফন স্বাস্থ্য বিধি মেনেই দাফন হয়েছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসন। তাদের দাবি তার মরদেহ তার পরিবারের লোকজন হাত দেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগের লোকেরাই তাকে দাফন করেছেন।
মারা যাওয়া সালামের মা সালেমা বেগম বলেন, আমার ছেলে মারা গেছে কিন্তু কেউ এগিয়ে আসে নাই। স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশের লোকজন এসে আমার ছেলের শরীরও একটা পাউডার ছিটিয়ে দিছের আর একজন হুজুর আনা হয়েছে কিন্তু আমার ছেলেরে গোসল করানো হয় নাই। আমি তাদেরকে পানি এনে দিলেও তারা আমার ছেলেরে গোসল করান নাই। আমার ছেলের মরদেহে কেউ হাত দেয়নি সবকিছু তার বাবা ও ভাইরা সবকিছু মিলেই সবকিছু করছে। আমার ছেলেকে খাটিয়া তুলতে দেয় নি মেম্বারে। আমারে গালিগালাজ করছে কেনে আমি ছেলেরে খাটিয়া তুলার কথা কইলাম।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসন আমাকে আমার ছেলের রিপোর্ট দিতে অইবো। আমার ছেলের এসব কিছু আঁচিল না। আমার ছেলে যদি রিপোর্টে এসব কিছু না আসে তাহলে আমি পুলিশের মাধ্যমে আমার ছেলে মরদেহ আবার উত্তোলন করে শরিয়ত অনুযায়ী দাফন করাব।
সালামের বাবা জইবুর মিয়া বলেন, আমার ছেলের মারা যাওয়া পর মেম্বার আমাকে বলে মরদেহ যেনো কিছু না করি। পরদিন পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোক এসে আমার ছেলের শরীরের নমুনা নেয় কিন্তু পরবর্তীতে তারা আমার ছেলেরে খাটিয়া তুলতে দেয় নাই। যারা এসেছিল তারা তাড়াহুড়া করছে পরে আমি আর আমার দুই ছেলে মিলিয়া তারে দাফন করি আর সবাই দূরে দাড়িয়ে ছিল।
মারা যাওয়া সালামের পরিবারের লোকজনের ইউপি সদস্যদের উপর আনা অভিযোগ মিথ্যা জানিয়ে শরিফ উল্লাহ বলেন, তার পরিবারের লোকজন স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশের উপর চড়াও হয়। তারা দাবি করে কেনো তাদের ছেলের মৃত্যুকে করোনা ভাইরাসের নাম দিয়ে তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। এ সময় মারা যাওয়া সালামের মা সবাইকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন পরবর্তীতে পঞ্চায়তের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়ে আসা খাটিয়া ফেরত নেওয়া হয়। আমি তাদের কোন গালিগালাজ করি নাই।
দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন সুমন বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ কেউ হাত দেয়নি। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনই তার দাফন সম্পন্ন করে। পরিবারের লোকজন অনেক দূরে অবস্থান করে।
দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাশেম বলেন, মরদেহ দাফনের সময় আমার পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান স্বাস্থ্য বিধি ও শরিয়ত বিধি মেনেই তার লাশ দাফন করা হয়েছে। এখানে তার পরিবারের কেউ লাশে হাত দেয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, আমিও বিষয়টি জেনেছি। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আমি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো। তদন্ত কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে তদন্ত করে আমাদের রিপোর্ট পেশ করার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।